শরীফ থেকে শরিফা গল্প সপ্তম শ্রেণী

     শরীফ থেকে শরিফা গল্প সপ্তম শ্রেণী 


খুশি আপা বললেন, আমরা একটা মজার খেলা খেলি চলো!
তালিকা থেকে পাওয়া সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদা কাগজে লিখে শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন জায়গায়
সাঁটিয়ে দেওয়া হলো।
এবারে খুশি আপা প্রতিবেশীদের নিয়ে তার যে সম্প্রদায়, সেটির যে বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে স্পষ্ট করে ব�োঝা যায়,
প্রত্যেককে সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে বললেন।
সবাই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর খুশি আপা হাততালি দিয়ে বললেন, বাহ! আমরা সম্প্রদায়ের
বৈশিষ্ট্যগুলো চমৎকারভাবে বুঝতে পেরেছি! নিজের সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকেও চিহ্নিত
করতে পেরেছি।
নতুন পরিচয়
পরের ক্লাসে খুশি আপা একজন অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। তিনি বললেন, ইনি ছোটবেলায় তোমাদের
স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। আজ এসেছেন, নিজের স্কুলটা দেখতে। সুমন জানতে চাইল, আপনার নাম
কী? তিনি বললেন, আমার নাম শরীফা আকতার।
শরীফা

শরীফা বললেন, যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক
হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই
আছি। নামটা কেবল বদলেছি। ওরা শরীফার কথা যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারল না।
আনাই তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি কোথায়? শরীফা বললেন, আমার বাড়ি এখান থেকে বেশ কাছে।
কিন্তু আমি এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে
এখানে এসেছে, আপনার পরিবারও তেমন এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। শরীফা বললেন, তা নয়।
আমার পরিবার এখানেই আছে। আমি তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি।
এখন সেটাই আমার পরিবার। শরীফা নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করলেন।

শরীফার গল্প

ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের
মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালোবাসতাম। কিন্তু
বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দের পোশাক কিনে দিতে রাজি হতো না। মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করতে আমার
বেশি ভালো লাগত। ব�োনদের সাজবার জিনিস দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সাজতাম। ধরা পড়লে বকাঝকা,
এমনকি মারও জুটত কপালে। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার বেশি ইচ্ছে করত। কিন্তু মেয়েরা আমাকে
খেলায় নিতে চাইত না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গেলেও তারা আমার কথাবার্তা , চালচলন নিয়ে হাসাহাসি
করত। স্কুলের সবাই, পাড়া-পড়শি এমনকি বাড়ির লোকজনও আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। আমি কেন
এ রকম একথা ভেবে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হতো, নিজেকে ভীষণ একা লাগত।

এক দিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে কিন্তু সে নিজেকে ছেলে
বলেই মনে করে। আমার মনে হলো, এই মানুষটাও আমার মতন। সে আমাকে বলল, আমরা নারী বা পুরুষ
নই, আমরা হলাম ‘ট্রান্সজেন্ডার’। সেই মানুষটা আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে নারী-
পুরুষের বাইরে আরও নানা রকমের মানুষ আছেন। তাদের বলা হয় ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠী। তাদের সবাইকে
দেখেশুনে রাখেন তাদের ‘গুরু মা’। আমার সেখানে গিয়ে নিজেকে আর একলা লাগল না, মনে হলো না যে
আমি সবার চেয়ে আলাদা। সেই মানুষগুলোর কাছেই থেকে গেলাম। এখানকার নিয়ম-কানুন, ভাষা, রীতি-
নীতি আমাদের বাড়ির চেয়ে অনেক আলাদা। তবু আমরা সবার সুখ-দু:খ ভাগ করে নিয়ে একটা পরিবারের
মতনই থাকি। বাড়ির লোকজনের জন্যও খুব মন খারাপ হয় কিন্তু তারা আমাকে আর চায় না, আশপাশের
লোকের কথায়ও তাদের ভীষণ ভয়।
আজ থেকে বিশ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছি। সেই থেকে আমি আমার নতুন বাড়ির লোকদের সঙ্গে, নতুন
শিশু আর নতুন বর-বউকে দোয়া-আশীর্বাদ করে পয়সা রোজগার করি। কখনও কখনও লোকের কাছে
চেয়ে টাকা সংগ্রহ করি। কিন্তু আমাদের ইচ্ছে করে সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন
কাটাতে, পড়াশোনা, চাকরি-ব্যবসা করতে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে মিশতে চায় না,
যোগ্যতা থাকলেও কাজ দিতে চায় না।
আমাদের মতো মানুষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। অনেক দেশেই তারা সমাজের বাকি মানুষের মতনই
জীবন কাটায়। তবে আমাদের দেশের অবস্থারও বদল হচ্ছে। ২০১৩ সালে সরকার আমাদের স্বীকৃতি
দিয়েছে। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্য কাজ করছে। শিক্ষার ব্যবস্থা করছে,
কর্মসংস্ র্ম থানের ব্যবস্থা করছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রচেষ্টা নিচ্ছে। নজরুল ইসলাম ঋতু, শাম্মী
রানী চৌধুরী, বিপুল বর্মণে র মতো বাংলাদেশের অনেক ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ
সমাজজীবনে এবং পেশাগত জীবনে সাফল্য পেয়েছেন।

Read More Story: surl.li/emxgob

 

Comments

Popular posts from this blog

দক্ষতা ছাড়াই ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার সঠিক উপায়:

Creating creative alcohol drinking marketing campaigns on social media